আধুনিক উপায়ে বেগুন চাষ পদ্ধতি

বাংলাদেশের কৃষির আধুনিকায়ন একটি সময়ের দাবী। অন্যান্য কৃষি প্রধান দেশের মতো বাংলাদেশেও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি গ্রহণ করে কৃষকদের সফলতা অর্জন করা সম্ভব। বঙ্গোচাষি সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে, এবং আধুনিক চাষাবাদের ম্যানুয়াল তৈরি করেছে, যা কৃষকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গাইডলাইন হিসেবে কাজ করবে। এখানে আধুনিক উপায়ে বেগুন চাষের বিস্তারিত পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো।

১. বেগুনের পুষ্টি গুণাগুণ:

বেগুনে রয়েছে ফাইবার, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন কে, এবং বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। বেগুনের নিয়মিত ব্যবহারে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

২. জাত নির্বাচন:

বেগুন চাষে সঠিক জাত নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিভিন্ন জাতের মধ্যে উজ্জ্বল, বারি বেগুন ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭ ইত্যাদি জাতের বেগুন ভালো ফলন দেয়। বঙ্গোচাষি চাষিদের জন্য বিভিন্ন উন্নত জাতের বেগুন সরবরাহ করে থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও ফলনের দিক থেকে উন্নত।

৩. বেগুনের জাতগুলোর বৈশিষ্ট্য:

  • উজ্জ্বল: এই জাতের বেগুন আকারে বড় এবং স্বাদে সুস্বাদু।
  • বারি বেগুন ১-৭: এগুলো আকারে মাঝারি থেকে বড় এবং খোসা পাতলা হয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও উন্নত।

৪. চারা রোপণের সময়:

  • ১ম ধাপ: নভেম্বর থেকে জানুয়ারি (রবি মৌসুম)।
  • ২য় ধাপ: ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল (গ্রীষ্ম মৌসুম)।

৫. জমি প্রস্তুতকরণ: (৩৩ শতাংশ জমির জন্য প্রযোজ্য)

বেগুন চাষের জন্য দোঁআশ মাটি সবচেয়ে উত্তম। জমি ভালোভাবে চাষ করে মাটি ঝুরঝুরে করতে হবে এবং নিচের সারগুলো প্রয়োগ করতে হবে:

  • টিএসপি: ৩০ কেজি
  • ডিএপি: ২০ কেজি
  • এমওপি: ৩০ কেজি
  • জিপসাম: ১৫ কেজি
  • ভার্মিকম্পোস্ট: ২৫০ কেজি

৬. বেডের মাপ:

  • বেড থেকে বেডের দূরত্ব: ১.৫ ফুট
  • বেডের উচ্চতা: ৮-১০ ইঞ্চি
  • ড্রেন গভীরতা: ১ ফুট
  • চারা থেকে চারার দূরত্ব: ২.৫-৩ ফুট

৭. মালচিং পদ্ধতি:

বেগুন চাষের ক্ষেত্রে মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখার জন্য মালচিং পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। মালচিং ফিল্ম দিয়ে বেড ঢেকে দিয়ে বেডের ভিতরে আলো ও বাতাস চলাচল করতে না দেওয়াই হবে সঠিক।

৮. চারা তৈরিঃ

বেগুন চাষের জন্য ট্রে ও কোকোপিট ব্যবহার করে চারা তৈরি করতে হবে। ১৫-১৮ দিন বয়সে চারা মূল জমিতে রোপণ করতে হবে।

৯. চারা রোপণ:

প্রতিটি চারা ২.৫-৩ ফুট দূরত্বে মালচিং ছিদ্র করে বেডের মাঝখানে কোকোপিট পর্যন্ত গভীরতায় রোপণ করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন চারার গোড়া মাটির গভীরে প্রবেশ না করে।

১০. মাচা প্রদান:

বেগুন চাষে A প্যাটার্নের মাচা সবচেয়ে উপযোগী। মাচার উচ্চতা ৫-৬ ফুট রাখতে হবে এবং বেডের দু’পাশে শক্তভাবে পুতে দিতে হবে।

১১. স্প্রে শিডিউল:

  • ১নং স্প্রে: চারার বয়স ৫ দিন (ম্যানসার ৩০ গ্রাম/২০ লিটার পানিতে)
  • ২ নং স্প্রে: চারার বয়স ১০ দিন (সাকা ২০ মিলি/২০ লিটার পানিতে)
  • ৩ নং স্প্রে: চারার বয়স ১৫ দিন (ম্যানসার ৪০ গ্রাম/২০ লিটার পানিতে)
  • ৪ নং স্প্রে: গাছের বয়স ২০ দিন (সাস্পেন্স ১৫ গ্রাম/২০ লিটার পানিতে)

১২. সেচ ব্যবস্থাপনা:

বেগুন চাষে মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখার জন্য ৫-৭ বার সেচ দেওয়া প্রয়োজন।

১৩. গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

  • মাচার নিচের প্রশাখাগুলো ছাটাই করতে হবে।
  • বেগুন মাটি বা মালচিং ফিল্মের সাথে স্পর্শ করানো যাবে না।
  • প্রতিনিয়ত জমি পরিদর্শন করতে হবে এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

এভাবে আধুনিক পদ্ধতিতে বেগুন চাষ করে আপনি উচ্চ ফলন এবং লাভবান হতে পারেন। আধুনিক কৃষি উপকরণ ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ পেতে বঙ্গোচাষির সাথে থাকুন।

Shopping Cart